বিশ্বরাজনীতি নানা কারণে উত্তপ্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, রাজনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্ব একটি অস্থির সময় পার করছে। বিশ্বরাজনীতিতে নতুন জটিলতা ও বহুমাত্রিকতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ, বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ক্রমবর্ধমান বৈরিতা বিশ্বরাজনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব রাখছে। এ বৈরিতা ও অস্থিরতার প্রভাব আমরা বেশি লক্ষ করছি উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত বিশ্বে। বৈরিতার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এ অঞ্চলে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
বিশ্বরাজনীতির এ জটিলতা এবং নানামুখী প্রভাব আমরা অতীতেও লক্ষ করেছি। অতীতে ঔপনিবেশিক শাসনামলে এক ধরনের রাজনীতি ছিল; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতির অন্যরকম এক চেহারা আমরা দেখেছি। দীর্ঘসময় ধরে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতায় বিশ্বরাজনীতির এক ধরনের প্রকৃতি বা চরিত্র ছিল। তার ভেতরেও ছিল নানা ধরনের বৈচিত্র্য। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিশ্বরাজনীতির নতুন বাস্তবতা আমরা দেখেছি। তবে গত কয়েক বছরের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে-অস্থিরতা ও আস্থাহীনতায় বিশেষ করে উন্নয়ন, প্রগতি, শান্তি ও নিরাপত্তা-এ বিষয়গুলো যেভাবে চাপের মধ্যে পড়ছে, আক্রান্ত হচ্ছে-তা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি করেছে। সর্বশেষ অনেকটা কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার মতো যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের বিরোধ এবং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক সময়ের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দূরত্ব, প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বি^তা, প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা।
এমন এক অস্থির ও বৈরী পরিবেশে একটি স্বস্তির সুযোগ তৈরি হয় সম্প্রতি দুটি গুরত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠক এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে। দুটি শীর্ষ বৈঠকের একটি হচ্ছে ব্রিকস, যেটি গত আগস্ট মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হয়। এ গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসাবে কাজ করে আসছে। যদিও এ গ্রুপের পাঁচটি রাষ্ট্র বৃহৎ শক্তির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসাবেই তাদের একটি বড় ভূমিকা বিশ্বে আছে। রাশিয়া, চীন ও ভারত পৃথকভাবে ও সম্মিলিতভাবে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার কথা বলছে। বিশ্বের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অনুন্নয়ন, সামাজিক সমস্যা ইত্যাদি একযোগে মোকাবিলা করা এবং সর্বোপরি বিশ্বে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার কথা বলছে, যাতে বিভিন্ন দেশ তাদের জনগণের জীবনমান উন্নত করার জন্য কাজ করতে পারে।
বিশ্বরাজনীতিতে সবসময়ই দরকষাকষির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ব্রিকস একটি শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়, যেটি দক্ষিণের দেশগুলোর এবং বিশ্বের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। এবারের যে শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সেটি স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বে একটি নতুন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যার একটি হচ্ছে বহুপাক্ষিকতাবাদকে গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বহুপাক্ষিকতাবাদের মধ্যে যুক্ত হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপাক্ষিকতাবাদ। কয়েকটি দেশ একত্রিত হয়ে যখন একটি সিদ্ধান্ত নেয় সেটি নিশ্চয়ই বহুপাক্ষিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কতটা বিশ্বকে প্রতিনিধিত্ব করে; কতটা ধনী, দরিদ্র, শক্তিশালী, দুর্বল সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে, তা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থেকে যায়। বহুপাক্ষিকতা আরও গণতান্ত্রিক হবে, আরও শক্তিশালী হবে, যদি সেখানে আরও বেশি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি থাকে। সেদিক থেকে বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে, সেটি হচ্ছে এ গ্রুপটিকে আরও সম্প্রসারিত করা। আরও ছয়টি নতুন রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটিকে আরও বৃহৎ পরিসরের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এটি বিশ্বের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ঘটনা।
এর কয়েকদিন পরই আমরা দেখলাম আরও একটি বড় গ্রুপ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি হচ্ছে জি-২০। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। এ বৈঠকের প্রতি সমগ্র বিশ্বের মানুষের নজর ছিল। এ সম্মেলনটিকে বলা যায় জি-২০-এর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সম্মেলনের আয়োজককারী রাষ্ট্র ভারত সেটিকে একটি বিশ্বমঞ্চ হিসাবে উপস্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে ভারত তার নেতৃত্বের একটি পূর্ণ প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছে, যার ফলে এ সম্মেলনের অর্জন ও তাৎপর্য নতুন মাত্রা পেয়েছে এবং সেটি সবাই পর্যবেক্ষণ করেছে। আমরা দেখেছি, গত বছর জি-২০-এর বালি শীর্ষ সম্মেলনে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি যৌথ ঘোষণা গ্রহণ করতে পারেনি। ইউক্রেন যুদ্ধ, জেলেনস্কি ইস্যুসহ অনেক বিষয়ে যে মতানৈক্য ও ভিন্ন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি তারা। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটি অভিন্ন যৌথ ঘোষণা দেয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে। সেই ঘোষণায় আবারও বহুপাক্ষিক কূটনীতির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার ঐক্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে বৈরিতা, যুদ্ধ কিংবা সংঘাত পরিহার করে একটি টেকসই উন্নয়নের রূপরেখার বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা, বিশ্বে আরও বেশি শান্তি প্রতিষ্ঠার তাগিদ আমরা লক্ষ করেছি। বৈঠকে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কণ্ঠে এটি আমরা দেখেছি। ভারত যথার্থই জি-২০ শীর্ষ বৈঠকটির প্রতিপাদ্য ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ’-এর কথা বলেছে। সেদিক থেকে জি-২০ শীর্ষ বৈঠককে একটি সফল আয়োজন হিসাবেই আমরা দেখছি।
বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো, যারা একদিকে জি-২০-এর প্রতিনিধিত্ব করছে, অন্যদিকে ব্রিকসের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং এর বাইরে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাষ্ট্র-সবাই মিলে যখন একটি সুন্দর বিশ্ব, সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার কথা বলে, তখন এর অবশ্যই একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। বিশ্বরাজনীতির জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। এরকম একটি আবহের মধ্যেই দুটি শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। যদিও এর মধ্যেও আমরা দেখছি ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান আছে, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
ব্রিকস ও জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বরাজনীতিতে এ বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির সুযোগ বেড়েছে এবং তাদের পারস্পরিক আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে ব্রিকস ও জি-২০-এর আলোচনা, ফলাফল এবং একটি আন্তরিক ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেই পরবর্তী সময় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা লক্ষ করেছি, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে এবং তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।
প্রতিটি মঞ্চেই আমরা লক্ষ করেছি, বাংলাদেশের একটি সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস সামিটে অংশ নিয়েছিলেন এবং তিনি জি-২০ শীর্ষ বৈঠকেও অংশ নেন। বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত প্রদান করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। বরাবরের মতোই আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য যে বিষয়গুলো ইতিবাচক, সেগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে ঝুঁকি, হুমকি বা চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলোর কথাও বাংলাদেশ বলেছে। বিশ্বে বিরাজমান যুদ্ধ যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার সমাপ্তিও প্রয়োজন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার একযোগে কাজ করার মানসিকতা তৈরি এবং মানবাধিকার রক্ষার কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এ মঞ্চগুলোতে স্পষ্টভাবে তাদের নিজস্ব অবস্থান ও মতামত তুলে ধরেছে।
উপরোক্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চের মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তনের বার্তা আমরা দেখতে পাই। অন্যদিকে যে বিষয়টি মানুষকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করছে এবং গুরুত্বসহকারে সামনে চলে আসছে, সেটি হচ্ছে বিশ্বরাজনীতির জটিল চরিত্র, ভূরাজনৈতিক চেহারা, এর ভেতরে জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রতিযোগিতা এবং সে প্রতিযোগিতা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বৈরিতা। এ বৃত্তের মধ্যেই বিশ্বরাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে। বৃত্ত ভেঙে ফেলার একটি প্রচেষ্টা বা ইঙ্গিত আমরা দেখেছি ব্রিকস, জি-২০ ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে। এর পাশাপাশি যে ঘটনাগুলো আমরা দেখছি, সেগুলোও মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি করছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, রাশিয়া তার আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং যুদ্ধে ইউক্রেন আরও শক্তি বৃদ্ধি করছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো ইঙ্গিত আমরা রাশিয়া কিংবা ইউক্রেনের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না। দুপক্ষই আক্রমণ-পালটা আক্রমণ করছে। ফলে বলা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আমরা এটাও লক্ষ করছি যে, জি-২০ সদস্যভুক্ত ভারত ও কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একটি হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধুপ্রতিম দুদেশের মধ্যে আমরা নতুন অবস্থা লক্ষ করছি। কানাডা ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক-সব দিক থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু আমরা দেখছি ভারত ও কানাডা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা তাদের সেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। হয়তো ভারত ও কানাডা এক পর্যায়ে এর সমাধান করবে, সম্পর্কের একটি স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হবে। কিন্তু যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যতই স্থিতিশীল থাকুক, যতই অংশীদারত্বমূলক হোক, বন্ধুত্বপূর্ণ হোক; সেখানে মতপার্থক্য থাকবে, মতবিরোধ থাকবে। এটিই বাস্তবতা।
ভারত-কানাডা সম্পর্কের বর্তমান শিক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময়ই বহুপাক্ষিকতা কিংবা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কারণে অনেক সময় অনেক বড় বড় উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়। একইসঙ্গে জাতীয় স্বার্থের কোনো বিষয় সামনে চলে এলে তার প্রভাব পড়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর। বিশ্বরাজনীতির সর্বজনীন এ বাস্তবতা অনেক সময় পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বস্তুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও জাতীয় স্বার্থের সমীকরণটি একটি কঠিন বাস্তবতা।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা আমাদের চিন্তার জায়গা থেকে একটি একপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করি। আমরা মনে করি, যেভাবে ঘটনা ঘটছে বা কোনো একটি পক্ষ যেভাবে ব্যাখ্যা করছে সেটি সঠিক। ব্যাপারটি তা নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির জায়গাটি অত্যন্ত পিচ্ছিল, বহুমাত্রিক, স্পর্শকাতর ও জটিল। সেখানে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ধারণা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাস্তবতা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন-সবকিছু মোকাবিলা করেই বিশ্বরাজনীতি এগিয়ে যায়। বিশ্বরাজনীতির ভেতরে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়, সে সম্ভাবনা ধরে রাখতে হলে যেমন এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে, একইসঙ্গে এটিকে বিশ্বরাজনীতির এগিয়ে যাওয়া বা বিশ্বরাজনীতির বাস্তবতার অংশ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটছে, প্রতিটি দেশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিংবা বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে নিজস্ব অবস্থান কিংবা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাধিকার দিয়েই তার ব্যাখ্যা করে। এটি শুধু একটি বা দুটি কিংবা পাঁচটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং সেটিই বিশ্বরাজনীতির মূল বিবেচনার বিষয়।
– ড. দেলোয়ার হোসেন: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রেষণে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োজিত।
দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত [লিংক]