প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি কাতার ইকোনমিক ফোরাম শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সফলভাবে অংশগ্রহণ এবং একই সঙ্গে কাতারের আমিরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে দেশে ফিরে এসেছেন। এরই মধ্যে এ সফর নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণ হচ্ছে এবং এর ফলাফল নিয়ে আলোচনা চলছে। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রীর কাতার ইকোনমিক ফোরামে অংশগ্রহণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কাতার ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রতি নতুন একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে এ সম্মেলনের পাশাপাশি কাতারের সঙ্গে জ্বালানি ও মানবসম্পদবিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এরই প্রমাণস্বরূপ বাংলাদেশ-কাতার ১৫ বছর মেয়াদি এলএনজি গ্যাস সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন করে, যার আওতায় বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১.৮ মিলিয়ন টন এলএনজি প্রতি বছর পাবে। চুক্তিটি এ সফরের সরাসরি ফলাফল বলা যেতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নে বর্তমান যে অগ্রগতি, সেখানে কাতারকে আরও বেশি করে যুক্ত করা এবং কাতারের সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করা ছিল প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থান তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের এ নতুন অবস্থান কাতারের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ; ফলে কাতার ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সম্মেলনটিতে অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
কাতার ইকোনমিক ফোরামের প্রথম যে সম্মেলনটি ২০২১ সালে হয়েছিল, সেখানে প্রায় ১০০ বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি বক্তব্য রেখেছিলেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, মন্ত্রী এবং বিনিয়োগ, জালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের ৫০০ জনের বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরামেও এ অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকে। এ ফোরাম গঠনের পেছনে কাতার মূলত যে কারণটি ব্যক্ত করেছে, সেটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের চোখে বিশ্বকে দেখা। আমরা জানি, এ ফোরাম আয়োজনের পেছনে ব্লম্বার্গ এবং বিশ্বের আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে। কাতার এ সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম দিতে পেরেছে এবং একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক গুরুত্বকে নতুন করে সামনে তুলে ধরতে পেরেছে এবং কাতার বৈশ্বিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তার অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে।
অন্যদিকে, বর্তমান পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় কূটনৈতিক ও কৌশলগত নানা বিষয়কে আমরা নতুন করে সামনে আসতে দেখতে পাচ্ছি, যা ভবিষ্যতের জন্য নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এ অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ এবং সমগ্র বিশ্বকে সংযোগ করার সুযোগ হিসাবে এ ফোরাম একটি ব্যাপক কূটনৈতিক ও কৌশলগত ভূমিকা রেখেছে।
সম্প্রতি তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরাম ২০২৩ অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করে এসেছেন। সেখানে প্যারাগুয়ে, ঘানা, হাঙ্গেরি, রুয়ান্ডাসহ বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং তাদের নীতিনির্ধারক মহলের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ, জালানি এবং অর্থনৈতিক কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। মাইকেল ব্লম্বার্গ নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
এ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ’ এ শিরোনামের সংলাপে তার নিজস্ব দর্শন, বাংলাদেশের অর্জন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিভিন্ন মানদণ্ডে বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরেছেন। এ ছাড়াও ওই সংলাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণ সহায়তা এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ফোরামের একটি বিশাল উপস্থিতি এবং একই সঙ্গে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের ভাবনা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দর্শন সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি দেশের নেতা হিসাবে এ ধরনের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের কাছে আরও শক্তিশালী করেছে। আইএমএফের ঋণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সে অর্থে কোনো চাপে নেই এবং বাংলাদেশ চায় এ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে। অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে তাই আইএমএফের সাহায্য প্রয়োজন। অন্যদিকে আইএমএফ খুব ভালো করেই জানে কাদেরকে ঋণ দেওয়া হয় এবং কারা ঋণ ফেরত দেওয়ার যোগ্যতা রাখে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি, ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনা এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতার ব্যাপারে আইএমএফ অবগত রয়েছে। বাংলাদেশে তার ইতিহাসে কখনোই ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ডিফল্টার হয়নি। ঋণ দেওয়ার সময় আইএমএফের মাথায় এ বিষয়গুলো ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া থেকে আমরা তেল আমদানি করি না কিন্তু আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি সেটি অত্যন্ত পরিষ্কার, সেটি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। বাংলাদেশের যে একটি স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সেই অবস্থানটি বাংলাদেশ পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না এবং বাংলাদেশ কোনো পক্ষপাতমূলক অবস্থানেও কখনো বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পষ্ট করে আলোচনায় তুলে ধরেছেন। নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি সবসময় বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করে গেছেন এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন। কেননা বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম সংগ্রামের জায়গা।
এ সফরে তিনি কাতার ইউনিভার্সিটির একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘নারীর ক্ষমতায়ন এবং কমিউনিটিতে প্রতিষ্ঠান গঠনে ভূমিকা’ শিরোনামে একটি সেমিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নারী ও শিশুদের বৃত্তিমূলক ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করা এবং সেগুলো থেকে তাদের তুলে এনে তাদের সম অধিকার নিশ্চিত করা সম্পর্কে জোর দিয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের চলমান সামাজিক অবস্থানে নারীদের ঘরে বসে ডিজিটাল ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং আগামীতে পরিবর্তনের অগ্রদূত হতে বলেন। এ ছাড়া তাদের ভবিষ্যতের নেতা হওয়ার জন্য সাতটি মূল্যবান পরামর্শ দেন। এ পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্যবোধকে অন্তর্ভুক্ত করা, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেওয়া, তাদের লক্ষ্যগুলো উপলব্ধি করার জন্য শক্তিশালী পরিকল্পনা তৈরি করা, নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা। এর পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে কথা বলেছেন, বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বাংলাদেশের শত শত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌদির বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিয়াহ এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী ফয়সাল আলিব্রাহিমের বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রীরা এবং প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ক আরও বহুমাত্রিক ও জোরদার করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাংলাদেশে আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে এবং বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে বিনিয়োগ ও পরিবেশ আকর্ষণীয় হয়েছে। সৌদি মন্ত্রীরা মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবকে মাতারবাড়ি ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন।
অন্যদিকে, এ সফরে কাতারের আমিরের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাতের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই সাক্ষাতে কাতারের আমিরসহ বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের ধারাবাহিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ আলোচনাটি একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, বিশেষ করে জ্বালানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও কাতারের সহযোগিতার একটি নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন হয়েছে।
জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে কাতার এবং বাংলাদেশ কাতার থেকে আরও বেশি এলএনজি আমদানি করতে ইচ্ছুক এবং এ ক্ষেত্রে কাতার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে এবং জ্বালানি চুক্তিতে ভবিষ্যতে আরও সরবারহ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে কাতার ও বাংলাদেশের সফল আলোচনা হয়েছে। কাতারের আমির বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের একটি অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বিশেষ আগ্রহী।
মুসলিম উম্মাহ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুসলিম দেশগুলো কিছু ক্ষেত্রে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত হয়, যা মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে কিভাবে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধি করা যায়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমিরের সঙ্গে আলোচনা করেন। বর্তমানে একটি বিশালসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাতারে অবস্থান করছে, তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং তারা যেন কোনোভাবেই চাকরি না হারায় সে ব্যাপারে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কাতারের আমির বলেন, ‘কাতার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশিরা এখানে থাকবে, কারণ তারা তাদের কাজের প্রতি পরিশ্রমী ও আন্তরিক এবং বাংলাদেশিদের নিয়ে আমরা খুব খুশি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জবাবে শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ইচ্ছা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহায় কাতার ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল আওসাজ একাডেমি পরিদর্শন করেন। শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিশেষ করে বিশেষায়িত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং অটিজম আক্রান্ত শিশুদের প্রাথমিক শনাক্তকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাতারের সহায়তা কামনা করেন।
কাতার ইকোনমিক ফোরামের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে রুয়ান্ডার গণহত্যার ইতিহাসকে পেছনে ফেলে দেশটির সাফল্যের প্রশংসা করেন। রুয়ান্ডার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্বিত, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং আপনি (শেখ হাসিনা) খুব ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করছেন।’
শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিনিয়োগের ব্যাপারে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনীতির সংকট এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
আমরা দেখতে পাই, প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর, বিশেষ করে তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরাম ও এর পাশাপাশি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল এবং এর মাধ্যমে একদিকে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বিস্তৃতি লাভ করেছে। এর সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতিতে চলমান নানা ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাভাবনা উঠে এসেছে। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা। এ ব্যাপারে কাতারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং সে দিক থেকে এ সফরটি বাংলাদেশের জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া বাংলাদেশে কাতারের এবং সৌদি আরবের আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন বাংলাদেশের অগ্রগতিগুলো সরকারপ্রধানদের কাছে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি বিভিন্ন বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিশ্বের চলমান সংকটগুলোয় বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। অন্যদিকে, তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য, বিশেষ করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেন, যা আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে। সুতরাং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পদার্পণের প্রেক্ষাপটে এ সফরের একটি অপরিসীম কূটনৈতিক মূল্য রয়েছে।
– ড. দেলোয়ার হোসেন: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রেষণে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োজিত।
যুগান্তরে প্রকাশিত [লিংক]