মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির সঙ্গে সে দেশের সেনাবাহিনীর উত্তেজনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় পড়ছে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে ব্যবহৃত মর্টার শেল। এর পেছনে বাংলাদেশকে সামরিক সংঘাতে যুক্ত করতে মিয়ানমারের দূরভিসন্ধী রয়েছে। ফলে বর্তমান অবস্থাকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্ববাসীর সামনে রোহিঙ্গা সংকটের পরবর্তী ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরতে হবে। সমস্যাটিকে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার জন্য ফান্ড সংগ্রহ ত্বরান্বিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন তাদেরও একত্র করতে হবে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর ভোরের কাগজ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক বৈঠকের আয়োজন করে দি কেআরএফ সেন্টার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স (সিবিজিএ) ও ভোরের কাগজ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সিবিজিএ’র চেয়ার (অনারারি) ড. দেলোয়ার হোসেন। গোলটেবিল পরিচালনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরীফ হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফজালুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সুফিয়ান সম্রাট, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালসের প্রভাষক উশ্রী বড়ুয়া, সিবিজিএ’র গবেষক মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সৈয়দ রাইয়ান আমীর। বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের যেখানে নিজভূমে ফিরে যাওয়ার কথা চলছিল সেখানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় চারবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ঢাকা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারপর নেপিডো বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে উল্টো বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে দায়ভার আরসা নামে একটি সংগঠনের ওপর চাপিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সবই ভূরাজনীতির বৈশ্বিক খেলার অংশ।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, অতিসম্প্রতি মিয়ানমার যা করছে তা আমাদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের প্রতি তারা এক ধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে। এই সংকট সমাধানে ধারাবাহিক আলোচনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জায়গায় আরও কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় কীভাবে কাজ করা যায় তা ঠিক করতে হবে। আমাদের ভৌগোলিক যেসব অ্যাডভানটেজ (সুবিধা) রয়েছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আরও বেশি চিন্তা করতে হবে।
শরীফ হাসান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে ভৌগোলিক কারণ আছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র-এই দুই দেশই দুই কৌশলে এখানে এগোচ্ছে। এর ফলে বর্ডারে অস্থিরতা বাড়ছে। এতে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান চাপে পড়বে। সংকট আরও ঘনীভূত হলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কষ্ট হবে। পাশাপাশি প্রত্যাবাসনও চ্যালেঞ্জে পড়বে। তিনি সংকট নিরসনে বিমসটেককে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন।
যুগান্তরে প্রকাশিত [লিংক]